আসসালামু আলাইকুম আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি। আজকের আলোচ্য বিষয়বস্তু হলো জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত এবং জুমার দিনের ১১ টি আমল এই বিষয় নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করব ইনশাআল্লাহ। এজন্য আপনি যদি এ বিষয়ে জানতে আগ্রহী হন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

প্রিয় পাঠক আপনি নিশ্চয়ই জুমার দিনের ফজিলত সম্পর্কে জানতে আমাদের এই পোস্টটি ওপেন করেছেন। এজন্য আমার এই আর্টিকেলে আপনাকে জানাই সুস্বাগতম আমি আজ আপনাদেরকে জুমার দিনের গুরুত্ব এবং ফজিলত কি কি সেই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা রাখবো। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই।

ভূমিকা

জুমা শব্দটি একটি আরবি শব্দ। জুমা শব্দের অর্থ হলো একত্রিত হওয়া, সম্মিলিত হওয়া। প্রত্যেক মুসলমানদের সমাবেশের ন্যায় একত্রিত হবার দিনটি হচ্ছে জুমার দিন। জুমার দিনটি অন্য সকল দিনের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই জুমার দিন নানা রকম সকল স্মরণীয় ঘটনা গুলো সংগঠিত হয়েছে যেগুলোর বর্ণনা আল্লাহ তায়ালা কোরআনের মাধ্যমে জানিয়েছেন। জুমার দিনটি হচ্ছে খুবই ফজিলতপূর্ণ একটি দিন।

জুমার দিন সম্পর্কে অনেকেরই নানারকম তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। আজ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জুমার ফজিলত কি, জুমার দিনের ১১ টি আমল, জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল, জুমার দিনের আসরের পরের আমল, জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত, জুমার দিনের দুরুদ এছাড়াও জুমার দিন সম্পর্কে আরো নানারকম তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব। এজন্য অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন।

জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত – জুম্মার দিনের ফজিলত

ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে জুমার দিনটিকে পবিত্র দিন হিসেবে বিবেচিত করা হয়ে থাকে। এজন্য এই দিনটির প্রতিটি সময়কেই খুবই গুরুত্বসহকারে পালন করা হয়ে থাকে। মুসলমানদের জন্য জুমার দিনটিকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবে বলা হয়ে থাকে। আর এটি বলার কারণ হলো এই দিনটিতে অন্য সকল দিনের চেয়ে বেশি ফজিলতপূর্ণ হয়ে থাকে। এছাড়াও জুমার দিনে ইসলামের ইতিহাসে সকল বড় এবং মহৎ ঘটনাগুলো ঘটেছে।

আরো পড়ুনঃ মুসলিম ছেলেদের আধুনিক নাম – কোরআন থেকে ছেলেদের নাম

জুমার দিনটি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে এই সম্পর্কে জানানোর জন্য নানা রকম হাদিস এবং কোরআনের আয়াত বর্ণিত হয়েছে। জুমার দিনের গুরুত্ব এবং ফজিলতগুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা প্রদানের লক্ষ্যে মহান আল্লাহতালা পবিত্র কোরআন শরীফের ভিতরে এই নামে একটি সূরা নাযিল করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা ‘জুমা’ এর মধ্যে বলেছেন,

“হে মমিনগণ জুমার দিনের যখন নামাজের জন্য আহবান করা হয় তখন তোমরা প্রতিপালক তথা আল্লাহর স্মরণে মসজিদের দিকে চলে আসো এবং তোমাদের দুনিয়াবী যাবতীয় সকল কাজকর্মগুলো থেকে বিরত রেখে ইবাদতে মশগুল হও। আর এটিই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে। (সূরা- জুমা-৯)” আর এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা জুমার দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝিয়েছেন।

এছাড়াও মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নানা হাদিসের মাধ্যমে জুমার দিনের ফজিলত এবং গুরুত্ব সম্পর্কে বলে গেছেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) জুমার দিন সম্পর্কে বলেন, প্রত্যেক মুমিনদের জন্য জুমার দিনটি হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ১০৯৮) তিনি আরো বলেন, যে দিনগুলোতে সূর্য উদিত হয়, ওই দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম।


আর এই সকল হাদিসের মাধ্যমে আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে আল্লাহ এবং তার রাসুল জুমার দিন আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটি বুঝিয়েছে। এছাড়াও জুমার দিনে নানা রকম মহৎ ঘটনা ঘটেছে যেমন জুমার দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেছেন এবং জুমার দিনে থাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন। এরপরে আদম আলাই সাল্লাম কে যখন পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন সেই দিনটিও ছিল জুম্মার দিন। এছাড়াও জুমার দিনেই পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে এবং জুমার দিনেই পৃথিবী শেষ হবে তথা কেয়ামত সংগঠিত হবে। আর এই সকল ঘটনা গুলোর কারণে এই দিনটিকে আরো মহৎ করে তুলেছে।

জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল – জুমার দিনের ১১ টি আমল

উপরের আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম জুমার দিনটির গুরুত্ব এবং ফজিলত কি এই সম্পর্কে। জুমার দিনটি ফজিলতপূর্ণ একটি দিন হওয়ার কারণে এই দিনে নানা রকম আমলের মাধ্যমে মুমিনগণ ইবাদত করে থাকেন। জমা দিন প্রতিটি মুসলিম উম্মাহের জন্য খুবই নিয়ামতপূর্ণ। নেয়ামত পূর্ণ হওয়ার কারণে এই দিনটি অসংখ্য আমলে পরিপূর্ণ। জুমার দিনের কিছু সৃষ্টি আমলগুলো নিচে আলোচনা করা হলো।

জুমার দিনে শ্রেষ্ঠ আমল গুলোর মধ্যে সর্বোত্তম আমল টি হল জুমার নামাজের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে আগে-আগে মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজ আদায় করা। জুমার দিন সম্পর্কে আল্লাহতালা কুরআনে এরশাদ করেন, হে মুমিনগণ, তোমাদেরকে জুমার দিনে যখন সালাত তথা নামাজ আদায়ের জন্য ডাকা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর সরনের দিকে এসো এবং তোমাদের ব্যবসা (ক্রয় বিক্রয়) করাকে পরিত্যাগ করো। আর এটি তোমাদের জন্য কল্যাণকর হবে।

আরো পড়ুনঃ জানাজার নামাজের নিয়ম – জানাজার নামাজের দোয়া

অতঃপর যখন সালাত শেষ হয়, তখন তোমরা তোমাদের জীবিকার জন্য জমিনে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো তার সাথে আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করতে থাকো যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পারো। (সুরা জুমা: ৯,১০) আর এই আয়াতটির মাধ্যমে আল্লাহতালা জুমার নামাজ আদায়ের গুরুত্ব সম্পর্কে জানিয়েছেন। এজন্য জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল টি হল জুমার নামাজ আদায় করা। এছাড়াও জুমার দিনের ১১ টি আমল সম্পর্কে নিচে বর্ণনা করা হলো। জুমার দিনের ১১ টি আমলের মধ্যে রয়েছে-

  1. জুমার দিনে সকালে আগে ঘুম থেকে উঠা,
  2. গোসল করে পবিত্র হওয়া,
  3. উত্তম পোশাক পরিধান করা,
  4. শরীরে সুগন্ধি ব্যবহার করা,
  5. জুমার নামাজের আজান দিলে ব্যবসা তথা ক্রয় বিক্রয় বন্ধ করা
  6. পায়ে হেঁটে মসজিদের জন্য রওনা হওয়া,
  7. আগে এবং দ্রুত মসজিদে প্রবেশ করা,
  8. তাহিয়্যাতুল মসজিদ পালন করা
  9. মসজিদে খুতবার সময় চুপ থাকা এবং মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনা
  10. জুমার নামাজ জামায়াতের সহিত পড়া এবং দোয়া করা কারণ এই দিনে দোয়া অধিক পরিমাণে কবুল হয়ে থাকে
  11. দুরুদ শরীফ বেশি করে পাঠ করা ও সূরা কাহাফ পাঠ করা

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আপনি নিশ্চয়ই এতক্ষণে জেনে গেছেন জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে। এছাড়াও এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আরো জানানো হয়েছে জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল , জুমার দিনের ১১ টি আমল সম্পর্কে। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করবেন।

তার পাশাপাশি আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। এই ধরনের আরো তথ্যমূলক আর্টিকেল পড়তে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। এতক্ষণ পাশে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই আশা রেখে শেষ করছি আজ এই পর্যন্তই আল্লাহ হাফেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *