আসসালামু আলাইকুম আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি। আজকের আলোচ্য বিষয়বস্তু হলো কিসমিস এর উপকারিতা ও অপকারিতা, কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা সমূহ এই বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করব ইনশাআল্লাহ। তাই কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা, কিসমিস খাওয়ার নিয়ম কি? কিসমিস এর উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কি কি? জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।

প্রিয় পাঠক আপনি নিশ্চয়ই কিসমিসের গুনাগুন সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক কিসমিস কিভাবে খেলে এর পুষ্টিগুণ সঠিকভাবে আমাদের শরীরে পৌঁছবে সেই সম্পর্কেও। যদি এই সকল বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত না থেকে থাকেন তাহলে অবশ্যই আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

ভূমিকা

কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।আমরা অনেকেই নানাভাবে কিসমিস খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা কিসমিস খাওয়ার নিয়ম সঠিক ভাবে জানি না । আজ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব কিসমিস খাওয়ার নিয়ম কি? কিসমিস এর উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কি?

রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয়? কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম , শুকনো কিসমিস খেলে কি হয়? দুধ কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে। তাই আপনি যদি কিসমিস সম্পর্কে ভালো ধারণা পেতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।

শুকনো কিসমিস খেলে কি হয় – শুকনা কিসমিস খেলে কি হয়?

শুকনো কিসমিস খেলে আমাদের শরীরের জন্য নানা ধরনের উপকার বয়ে আনতে পারে। শুকনো কিসমিসের মধ্যে পটাশিয়াম বিদ্যমান থাকে আর এই পটাশিয়াম আমাদের এটা শরীরের উচ্চ মাত্রার সোডিয়ামকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে থাকে এবং তার পাশাপাশি শরীরের রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও শুকনো কিসমিস এর মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। আর এটির কারণে আমাদের শরীরকে দ্রুত শক্তি যোগান দিয়ে থাকে।

কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

খাওয়ার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবেনা। তবে এর উপকারিতা শুকনো কিসমিস এর চেয়ে বেশি ভিজিয়ে খাওয়ার মাধ্যমে। কিসমিস খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের নানারকম সমস্যা দূর হয়ে যায়। কিসমিস আমাদের শরীরের রক্তের লাল কণিকা গুলোকে বৃদ্ধি করে থাকে। কিসমিস ভেজানো পানি যদি আপনি খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের রক্ত ধীরে ধীরে পরিষ্কার হওয়া শুরু হবে। এছাড়াও আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার জন্য এর পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণটি আপনার শরীরে প্রভাব ফেলবে। এক্ষেত্রে আপনি কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে প্রথমে এক গ্লাস পানি নিতে হবে আর এই পানিতে কিছু সংখ্যক কিসমিস দিতে হবে। আর এই ভেজানো কিসমিস সকালে ঘুম থেকে উঠার পরে খালি পেটে খেতে হবে তার সঙ্গে আপনি ভেজানো কিসমিসের গ্লাসে থাকা পানি গুলো কেউ পান করতে পারে। আর এই পদ্ধতি অবলম্বন করে কিসমিস ভিজিয়ে খেতে পারেন।

প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত

আমরা জানি এ কিসমিস খাওয়ার নানারকম উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু এই উপকারিতা গুলো তখনই পাওয়া সম্ভব যখন আমরা এটি পরিমান মত খাব। আমরা প্রায় সকলেই জানি যে সকল জিনিসের পরিমাণ এর চেয়ে অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। যদি এটি পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত খাওয়া হয় তাহলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

এ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলোর মধ্যে উপকারের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি হয়ে থাকে। কিসমিস যেহেতু আমাদের শরীরে ওষুধের মত কাজ করে তাই ওষুধ যেমন অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয় তেমনভাবে কিসমিস অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে এর উপকারে আসবে না। তাই কিসমিস খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে প্রতিদিন ৫০ গ্রাম এর বেশি খাওয়া যাবেনা।

আর এই নিয়মটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কিন্তু ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটি ১০ থেকে ১৫ পিচ কিসমিস হবে। ছোট বাচ্চাদের জন্য এই পরিমাণ এর বেশি কিসমিস খাওয়ানো ঠিক হবে না। আর অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ডায়রিয়াসহ আরো নানারকম রোগ দেখা দিতে পারে। তাই কিসমিস খাওয়ার সময় সঠিক নিয়ম মেনে খেতে হবে।

রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয়

আমাদের মধ্যে যাদের ঘুমের সমস্যা হয় তারা প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেতে পারেন। রাতে ঘুমানোর আগে যদি কেউ কিছু খেতে পারেন তাহলে ভালো হবে তার সাথে তার রকম মানসিক সমস্যা থেকে দূরে থাকা যাবে। এক্ষেত্রে আপনি রাতে ঘুমানোর আগে কিছু কিসমিস চিবিয়ে খেতে পারেন। আর রাতে কিসমিস চিবিয়ে খাওয়ার মাধ্যমে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও বৃদ্ধি করাতে সহায়তা করবে।

এছাড়াও রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। যদি রাতে ঘুমানোর আগে ফাইবার সমৃদ্ধ কিসমিস খান তাহলে আপনার পেট অনেকক্ষণ ধরা থাকবে এর ফলে অধিক খিদে পাওয়া রোধ করবে। আর এই খিদে পাওয়াকে রোধ করলে আপনার ওজন সহজেই কমিয়ে আনতে পারবেন। তাই দ্রুত ওজন কমানোর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে হলো রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খাওয়া।

দুধ কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

আমরা সকলেই জানি দুধ হচ্ছে সুষম খাদ্য। দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে তার সঙ্গে দুধের উপকারিতাও রয়েছে অনেক এবং কিসমিসের উপকারিতাও প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। আর এজন্য যদি আপনি দুধ এবং কিসমিস একসঙ্গে খেতে পারেন তাহলে এদের উপকারিতা গুলো আমাদের শরীরে ভালোভাবে প্রভাব ফেলতে পারবে। আর এটি খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের নানা রকম সমস্যা থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করে থাকে।

দুধ কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা প্রচুর পরিমাণে রয়েছে যা বলে শেষ করা যাবে না। দুধ কিসমিস খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের দুর্বলতাকে সারিয়ে তুলতে সহায়তা করে থাকে এবং তার পাশাপাশি আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে শক্তি যোগান দিতে ভূমিকা রাখে। আর এই উপকারিতা গুলো সঠিকভাবে পাওয়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে দুধ কিসমিস খাওয়ার নিয়ম জানতে হবে। আর এই সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি খেতে পারেন তাহলে এটি উপকারিতা অনেক হবে।

আরো পড়ুনঃ টমেটো খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিন

দুধ কিসমিস একসাথে খাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে এক গ্লাস সমপরিমাণ গরম দুধ নিতে হবে আর এর সঙ্গে কিছু কিসমিস স্বল্প পরিমাণ পানি নিয়ে ব্লেন্ড করে দুধের সাথে মিশ্রণ করতে হবে। আর এই মিশ্রণটিকে আপনি সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর দুধের সঙ্গে ব্লেন্ডকৃত কিসমিসটি ভালো ভাবে মিশ্রণ করে তারপরে পান করতে হবে। আর এটি খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের নানারকম জ্বালাপোড়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন।

কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা কি? কিসমিস এর উপকারিতা

কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। কিসমিস খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের রোগ পতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে পারি। কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা আমাদের হৃৎপিণ্ড এর জন্য খুবই উপযোগী। এজন্য কিসমিস খেলে আমাদের আটকে ভালো রাখতে সহায়তা করে তার পাশাপাশি আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল গুলোকে দূর করতে সহায়তা করে থাকে।

এছাড়াও কিসমিসের বিদ্যমান রয়েছে আইরন। এই আয়রন আমাদের শরীরের রক্তস্বল্পতাকে কমিয়ে আনতে সহায়তা করে। কিসমিসে আরো রয়েছে কার্বোহাইড্রেট । আর এই কার্বোহাইড্রেট এর মাধ্যমে আমাদের শরীরকে শক্তি যোগান দিয়ে থাকে। কিসমিসে আরো বিদ্যমান রয়েছে খনিজ পদার্থ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। আর এগুলো আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে থাকে।

কিসমিস খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের নানারকম সমস্যা দূর হয়ে যায়। কিসমিস আমাদের শরীরের রক্তের লাল কণিকা গুলোকে বৃদ্ধি করে থাকে। কিসমিস ভেজানো পানি যদি আপনি খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের রক্ত ধীরে ধীরে পরিষ্কার হওয়া শুরু হবে। কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার জন্য এর পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণটি আপনার শরীরে প্রভাব ফেলবে। ভেজানো কিসমিস খাওয়ার সাথে সাথে আপনি যদি এর পানিও খেতে পারেন তাহলেও এটি শরীরের জন্য উপকারী।

কিসমিস খাওয়ার ফলে আমাদের ব্রেইন কে ভালো রাখতে সহায়তা করে, উচ্চ রক্তচাপ কে প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে ভূমিকা পালন করে থাকে তাই যাদের ডায়াবেটিস রোগটি আছে তারা কিসমিস খেতে পারেন, কিসমিস খাওয়ার মাধ্যমে উনার রক্তের সুগারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও আমাদের শরীরের হাড় এবং তাদের সুরক্ষা করে থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্যকে দূর করতে সহায়তা করে, রক্তস্বল্পতা দূর করে থাকে।

কিসমিসের ক্ষতিকর দিক – কিসমিসের অপকারিতা কি?

প্রকৃতপক্ষে শরীরের জন্য কিসমিসের উপকারিতা অনেক রয়েছে। কিসমিস খাওয়ার এত সকল উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও এর কিছু ক্ষতিকারক দিক বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু এই উপকারিতা গুলো তখনই পাওয়া সম্ভব যখন আমরা এটি পরিমান মত খাব। আমরা প্রায় সকলেই জানি যে সকল জিনিসের পরিমাণ এর চেয়ে অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। যদি এটি পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত খাওয়া হয় তাহলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

বেশি পরিমাণে কিসমিস খেলে আমাদের পরিপাকতন্ত্রের নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর কারণ হচ্ছে কিসমিসের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। প্রকৃতপক্ষে ফাইবার আমাদের শরীরের জন্য উপকারী হলেও যদি বেশি পরিমাণে এটি খাওয়া হয় তাহলে আমাদের পরিপাকতন্ত্রে নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও বেশি পরিমাণে কিসমিস খেলে আমাদের রক্তের শর্করার মাত্রাকে বাড়িয়ে দিতে পারে। আমরা জানি কিসমিস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে থাকে।

কিন্তু কিসমিসের রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি এবং ক্যালরি যেটি মাত্রাতিরিক্তভাবে খেলে স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি হতে পারে। অতিরিক্ত পরিমাণে কিসমিস খেলে ওজন বৃদ্ধি পেতে শুরু করে এছাড়াও অতিরিক্ত পরিমাণে কিসমিস খাওয়ার ফলে অনেকেরই ত্বকের এলার্জি সৃষ্টি হতে পারে। তাই সকলকেই সাবধানতার সহিত কিসমিস খেতে হবে। আর কখনোই মাত্রাতিরিক্ত কিসমিস খাওয়া যাবেনা।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আজ আমরা আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করেছি কিসমিস খাওয়ার নিয়ম কি? কিসমিস এর উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কি কি এছাড়াও কিসমিস কিভাবে খেলে আমাদের শরীরের জন্য উপকার বয়ে আনবে, কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা  ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। 

আপনার কাছে যদি আজকের এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন এবং এই ধরনের আরও তথ্য মূলক পোস্ট পোস্ট করতে চাইলে নিয়মিত আমি তো ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন ধন্যবাদ। আসসালামুয়ালাইকুম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *