আমরা অনেকেই চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকি। আমরা অনেকেই চর্মরোগ কি তা ভালোভাবে জানি না। কিন্তু চর্মরোগ সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকার কারণে এই রোগটি সম্পর্কে আমরা উদাসীন হয়ে থাকি। আজ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে চর্ম রোগের ঔষধের নাম ও চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় জানানোর চেষ্টা করবো। তাই আপনি যদি চর্মরোগ কেন হয়? চর্ম রোগের ঔষধের নাম ও চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় সমূহ গুলো কি কি। তাই চর্মরোগ সম্পর্কে জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
চর্মরোগ মানবদেহের অন্যান্য রোগের থেকে একেবারেই আলাদা একটি রোগ। অনেক মানুষই এ রোগ স্বাভাবিকভাবে দেখলেও প্রকৃতপক্ষে চর্মরোগ কোন সাধারণ সমস্যা নয়। এই চর্ম রোগের কারণে নানা রকম সমস্যা আমাদের শরীরে দেখা দিতে পারে। তাই এই চর্মরোগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব।
চর্মরোগ কি? চর্মরোগ কেন হয়? চর্মরোগের কারণ সমূহ কি কি?
আমাদের শরীরের ত্বক কিংবা চামড়া গুলো সাধারণ ভাবে একটি শরীরের মধ্যে সবথেকে বেশি সুরক্ষা দায়ক অঙ্গ। প্রায়শই আমাদের শরীরের ত্বকে নানারকমের রোগ দেখা দিয়ে থাকে আর এই রোগগুলোকে সাধারণভাবে আমরা চর্মরোগ বলে থাকি। আমাদের মাঝে অনেকেই চর্মরোগ কি? চর্মরোগ কেন হয় এই সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকেনা আর যার কারণে আমাদের শরীরে ত্বক জ্বালাপোড়া করতে থাকে, অনেক সময় ঘা দেখা দিতে পারে তার পাশাপাশি ত্বকের চুলকানি পারতে পারে।
আমাদের শরীরে চর্মরোগ নানা কারণে হতে পারে। যার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ সমূহ গুলো কে তুলে ধরার চেষ্টা করব। আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা বেশি সময় ধরে বাইরে অবস্থান করে থাকে। যার ফলে বেশিরভাগ সময় ধরেই সূর্যের আলোতে থেকে থাকেন তাদের চর্মরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর বাইরে বেশিক্ষণ অবস্থান করার ফলে বাইরের মাটি আমাদের শরীরে জমা হতে থাকে যার ফলে ও এই চর্ম রোগ দেখা দিতে পারে।
আমরা অনেকেই গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করে থাকি আর এই সাবানে যদি অতিরিক্ত পরিমাণে সোডা ব্যবহৃত করা হয়ে থাকে তাহলেও অতিরিক্ত সোনার কারণেও চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। আমরা অনেকেই এন্টিবায়োটিক সেবন করে থাকে আর এই গুলোতে নানা রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে যার কারণে এগুলো খেলে ত্বকের চর্মরোগ হতে পারে। তাই আমরা অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পূর্বে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ বাতের ব্যথার লক্ষণ – বাতের ব্যথা থেকে মুক্তির উপায়
আমাদের শরীরের যদি কোন ভাবে ব্যাকটেরিয়া কিংবা ছত্রাক ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তাহলেও চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। চর্মরোগ ত্বককে অপরিচ্ছন্ন রাখার ফলে ও দেখা হতে পারে। এগুলো ছাড়াও একজন মানুষের নানা কারণে শরীরে চর্ম রোগ সৃষ্টি হতে পারে। চর্মরোগ সৃষ্টি হলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে না হলে এটি অনেক বিপজ্জনক হতে পারে।
চর্ম রোগের চিকিৎসা কি – চর্ম রোগ সারানোর উপায়
আমাদের শরীরে অনেক সময় চর্মরোগ দেখা দিয়ে থাকে। আমরা অনেকেই এ চর্মরোগটিকে সাধারণ সমস্যা হিসেবে গণ্য করে থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই চর্ম রোগের কারণে আমাদের শরীরে নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। এই চর্ম রোগের নানারকম প্রকারভেদ বিদ্যমান রয়েছে তার মধ্যে কিছু হল ত্বকে অ্যালার্জি, দাদ, ত্বকে ঘা সৃষ্টি, মেসতা ইত্যাদি । তাই এই সমস্যাগুলো হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে এর চিকিৎসা সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা খুবই জরুরি।
চর্ম রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে জানার আগে আমাদের জানতে হবে চর্ম রোগ ঠিক কি কারনে আমাদের শরীরে দেখা দিয়ে থাকে। সাধারণত আমাদের শরীরে ভিটামিন এ এর অভাবে চর্মরোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে। আর এই ভিটামিন এ এর অভাব আমাদের শরীরে বৃদ্ধি পেলে নানা রকম সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। তাই চর্মরোগ সারানোর জন্য বেশি পরিমাণে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
চর্ম রোগের হাত থেকে মুক্তি পাবার আরো একটি উপায় হচ্ছে আপেলের রস ব্যবহার করা। আপেলের রস চর্ম রোগ নিরাময় করতে পারে। আপনি যদি এই নিয়মিত আপেলের রস ব্যবহার করতে পারেন তাহলে এর থেকে ভালো ফলাফল পারেন পেতে পারেন। আপেল আমাদের শরীরের ত্বকের পাশাপাশি আমাদের মুখের ত্বক গুলোকেও ভালো রাখতে সহায়তা করে থাকে। আপেল খাওয়ার ফলে আমাদের মুখের তৈলাক্ত এর পরিমাণ কমিয়ে আনতে সহায়তা করে।
চর্মরোগ সারানোর ক্ষেত্রে রসুন খুবই উপকারী একটি উপাদান। চর্ম রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে রসুন এর ব্যবহার নানাভাবে করা সম্ভব। তার মধ্যে কিছু পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হলো। আর এই পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করলেই চর্মরোগ দ্রুত সারানো সম্ভব হবে। শরীরের যে স্থানে জন্মরোগ যেমন ফোড়া কিংবা ভ্রমণ বিদ্যমান আছে সেই স্থানগুলোতে রসুনের রস লাগিয়ে রাখতে হবে। আর এই রসুন এর রস লাগানোর ফলে চর্ম রোগের তাৎক্ষণিক উপশম পাওয়া সম্ভব হয়।
এছাড়াও এই রসুনের সাথে সূর্যমুখী একসাথে করে পিসে একটি বান্ডেল তৈরি করতে হবে। বান্ডেল তৈরি করা হয়ে গেলে এটি আপনার গলার পিন্ডের অর্থাৎ মাম্পাসের উপরিভাগ অংশে বেধে দিন। এগুলো ছাড়াও রসুন এবং সরিষার তেল মিশিয়ে হালকা গরম করে আমাদের ত্বকে লাগিয়ে রাখলে চর্ম রোগের নানা রকম চুলকানি কিংবা পচড়ার মতো সমস্যা হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
চর্ম রোগের ত্বক শুষ্কতা সারানোর ক্ষেত্রে সরিষার তেল এর সাথে হলুদ মিশ্রণ করে তোকে আলতো করে ম্যাসাজ এর মত করে ব্যবহার করলে ত্বকের নানা রকম শুষ্কতা হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও চর্মরোগ সারানোর জন্য করোলার রস খেতে পারেন। করলা আমাদের শরীরের রক্তকে পরিশুদ্ধ করতে সহায়তা করে থাকে। তাই করোলা এর রস নিয়মিত খেলে চর্মরোগ সারাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
চর্ম রোগের ওষুধের নাম – চর্ম রোগের ক্রিম
চর্মরোগ আমাদের শরীরের ত্বকে দেখা দিয়ে থাকি। তাই এই রোগটি ব্যাপারে উদাসীন হলে চলবে না।কারণ যদি চর্মরোগ সম্পর্কে উদাসীন হয়ে পড়েন তাহলে এটি আমাদের শরীরের জন্য বিপদজনক হতে পারে। চর্মরোগ ভালো করার জন্য কিছু ঔষধ আপনি সেবন করতে পারেন। তবে অবশ্যই আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এই ওষুধগুলো সেবন করতে হবে।
চর্ম রোগের ঔষধের নাম হলো
- Alatrol,
- Bilastin Tablet,
- Sedno,
- Omastin Cap,
- Rupadin 10,
- Bioplagen 20,
- Drama 50,
- Terbinafin Tab,
- Bestameson,
- Flugal 50,
- Salobate Ointment
চর্ম রোগের জন্য উপরোক্ত ঔষধগুলো সেবন করলে অনেকাংশে ভালো ফলাফল পেতে পারেন। কিন্তু ঔষধ সেবনের পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে অন্যথায় সেবন করা ঝুকিপূর্ণ হবে।
চর্ম রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা – চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায়
চর্মরোগ দূর করার জন্য অনেকেই ঘরোয়া চিকিৎসা অবলম্বন করতে চান। আর এই ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে অনেকেই ভালো ফলাফল পেয়ে থাকেন। আজ আমরা আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব চর্ম রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে এবং ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে কিভাবে চর্মরোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব সেই সম্পর্কে। আর এই পদ্ধতি গুলো আপনি অবলম্বন করলে আপনার চর্মরোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
চর্মরোগ নিরাময় করতে নিম পাতা খুবই কার্যকর একটি পদ্ধতি। আপনি এই নিম পাতা নানাভাবে ব্যবহার করতে পারেন। যেমন আপনি যখন গোসল করবেন তখন গোসল করার পানির সঙ্গে নিমপাতা দিয়ে গরম করে নিতে পারেন। আর এই নিমপাতা মিশ্রণকৃত গরম পানি দিয়ে নিয়মিতভাবে গোসল করলে চর্মরোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও নিম পাতা আপনি খেতে পারেন। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে নিমপাতার রস খেলে চর্মরোগ ছাড়াও আমাদের শরীরের নানা রকম সমস্যা দূর করতে সক্ষম ।
নিম পাতা আপনি আমাদের শরীরের ত্বকের বিভিন্ন ক্ষতস্থানে থেতো করে লাগিয়ে রাখলে খুব সহজে নিরাময় করা সম্ভব। আর এই পদ্ধতি তে নিয়মিত কিছুদিন ব্যবহার করলে খুব দ্রুত ক্ষত সেরে যায়। এছাড়াও চর্মরোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে আপনি মুলা পাতার রস ব্যবহার করতে পারেন। চর্মরোগ সারাতে মোলাপাতার রস খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। আপনি যদি তোকে নিয়মিত গোলাপাতা ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আপনার চর্ম রোগ দ্রুত সেরে যাবে।
চর্ম রোগের হাত থেকে মুক্তি পাবার আরো একটি উপায় হচ্ছে আপেলের রস ব্যবহার করা। আপেলের রস চর্ম রোগ নিরাময় করতে পারে। আপনি যদি এই নিয়মিত আপেলের রস ব্যবহার করতে পারেন তাহলে এর থেকে ভালো ফলাফল পারেন পেতে পারেন। আপেল আমাদের শরীরের ত্বকের পাশাপাশি আমাদের মুখের ত্বক গুলোকেও ভালো রাখতে সহায়তা করে থাকে। আপেল খাওয়ার ফলে আমাদের মুখের তৈলাক্ত এর পরিমাণ কমিয়ে আনতে সহায়তা করে।
আরো পড়ুন: ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে নিন
চর্মরোগ সারানোর ক্ষেত্রে রসুন খুবই উপকারী একটি উপাদান। চর্ম রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে রসুন এর ব্যবহার নানাভাবে করা সম্ভব। তার মধ্যে কিছু পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হলো। আর এই পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করলেই চর্মরোগ দ্রুত সারানো সম্ভব হবে। শরীরের যে স্থানে জন্মরোগ যেমন ফোড়া কিংবা ভ্রমণ বিদ্যমান আছে সেই স্থানগুলোতে রসুনের রস লাগিয়ে রাখতে হবে। আর এই রসুন এর রস লাগানোর ফলে চর্ম রোগের তাৎক্ষণিক উপশম পাওয়া সম্ভব হয়।
চর্ম রোগ সম্পর্কে সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
প্রশ্নঃ চর্ম রোগের লক্ষণ কি কি?
উত্তরঃ চর্ম রোগের প্রধান যে লক্ষণগুলো দেখা যায় সেটি হলো আক্রান্ত স্থানে অধিক পরিমাণে চুলকানি। এক্ষেত্রে চুলকানির পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পেতে শুরু করে এবং তার পাশাপাশি সেই স্থানে ফুসকুরিতে পুজ এর সৃষ্টি হয়ে থাকে।
প্রশ্নঃ চুলকানির মলম এর নাম কি?
উত্তরঃ চুলকানির মলম এর নাম হলো Salobate Ointment
প্রশ্নঃ চর্মরোগের সবচেয়ে ভালো ঔষধ কোনটি?
উত্তরঃ চর্মরোগের নানা রকম ঔষধ বিদ্যমান রয়েছে। এর মধ্যে চর্মরোগের সবচেয়ে ভালো ঔষধ হলো Flugal 50, এ্যালাট্রোল (Alatrol) ট্যাবলেট ।
প্রশ্নঃ গোসলের পর শরীর চুলকানির কারণ কি?
উত্তরঃ গোসলের পর সাধারণথ শুষ্ক ত্বকে আর্দ্রতার অভাব থাকে ও তার পাশাপাশি টানটান বা চুলকানি অনুভব করতে পারে। আর এই কারণে গোসলের পর শরীরে চুলকানি হয়ে থাকে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আজ আমরা এই আর্টিকিনের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করেছি চর্মরোগ কি? চর্মরোগ কেন হয়? চর্ম রোগের ঔষধের নাম, চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় সমূহ গুলো কি কি? আশা করে আপনি এগুলো সম্পর্কে ভালো একটি ধারণা পেয়েছেন। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে।
তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এই ধরনের আরও আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট প্রতিনিয়ত ভিজিট করুন। এতক্ষণ পাশে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সুস্থ থাকবেন ভালো থাকবেন এই আশা রেখে শেষ করছি আজ এই পর্যন্তই আল্লাহ হাফেজ।