আসসালামু আলাইকুম আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি। আজকের আলোচ্য বিষয়বস্তু হলো ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে। তাই আপনি যদি ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার এবং ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে নিন

এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আজ আমরা জানতে পারব ডেঙ্গু রোগের উপসর্গগুলো কি কি কার সাথে আরো জানতে পারবো ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ গুলো কি কি, এই জ্বরে আক্রান্ত হলে কি কি খেতে হবে, এই জ্বর থেকে মুক্তি উপায় গুলো সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব।

ভূমিকা

বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আছে অনেক আগে থেকেই। বাংলাদেশ ষড় ঋতুর দেশ। এদেশে যখন বর্ষা আসে তখন এই ডেঙ্গু রোগের হার কমবেশি বেড়ে থাকে। এই শতাব্দীর শুরু থেকেই ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বেড়ে যায় আর এই রোগটি বিশেষ করে রাজধাণীতে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করে। এরফলে এটি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা শুরু করে। বর্তমানে ডেঙ্গু ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে ।আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন ডেঙ্গু কি, ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার, ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে, ডেঙ্গু উপসর্গ গুলো কি কি, ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে ইত্যাদি আরো নানারকম বিষয় সম্পর্কে। এজন্য অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।

ডেঙ্গু কি? ডেঙ্গু কাকে বলে? 

বর্তমানে ডেঙ্গু একটি আতঙ্কের নামে পরিচিতি লাভ করেছে। অনেকেই এই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং এটির ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। তাই এটির সম্পের্কে ভালো ধারণা থাকা জরুরি। আজ আমরা এই ডেঙ্গু রোগের নানা রকম তথ্য নিয়ে আলোচনা করব। ডেঙ্গু হচ্ছে একধরণের ভাইরাসজনিত রোগ যেটি কিনা মশার মাধ্যমে ছড়ায়। সাধারণ ভাবে বলতে গেলে ডেঙ্গু একটি মশার মাধ্যমে ছড়ানো ভাইরাসের কারণে ব্যস্ত হওয়া একটি মশা বাহিত রোগ।

ডেঙ্গুর মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পরে যা জনস্বাস্থ্যকে সমস্যার মুখে ফেলে দেয়। এই ভাইরাসের মূল বা প্রধান মাধ্যমটি হচ্ছে একটি মশা যার নাম এডিস মশা। ডেঙ্গু একটি গম্ভীর রোগ হতে পারে এবং যত্নাত্মক যত্নের মাধ্যমে রোগীকে পর্যাপ্ত জেনে নেওয়া এবং সঠিক ভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উপক্রান্তিয় এবং ক্রান্তীয় অঞ্চলের গ্রীষ্ম প্রধান দেশে ডেঙ্গুর এবং এর প্রভাবে যে ডেঙ্গু জ্বর যা কিনা একটি অত্যন্ত সাধারণ ভেক্টর বাহিত যা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত একটি রোগ।

ডেঙ্গু উপসর্গ

ডেঙ্গু জ্বর বা ডেঙ্গু হচ্ছে একটি মশাবাহিত ভাইরাস ঘটিত এক ধরনের রোগ। এই ডেঙ্গু জ্বরের প্রভাবে আমাদের দেহের নানা রকম উপসর্গর দেখা মিলতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর বিশেষ কোনো উপসর্গ দেখা নাও যেতে পারে। শুধু অল্প কিছু ক্ষেত্র বিশেষ এই রোগের প্রভাব লক্ষণীয় হয়। ডেঙ্গুর সাধারণ কিছু উপসর্গ গুলো হল-ডেঙ্গু যেহেতু একটি মশাবাহিত ভাইরাস জনিত রোগ এই জন্য এটি আক্রান্ত হলে মানুষের জ্বর ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইটের এর বেশি হতে পারে।

এছাড়াও ডেঙ্গুর ফলে তীব্র মাথা যন্ত্রণা দেখা দিতে পারে। ত্বকের বিভিন্ন স্থানে ফুসকুড়ি হতে পারে। মাথা ঘোরা থেকে শুরু করে বমি বমি ভাব হতে পারে।ডেঙ্গু জ্বরের ফলে চোখের পিছনে ব্যথা অনুভূতি দেখা দিতে পারে এছাড়াও মাংসপেশী এবং অস্থি সন্ধিতে যন্ত্রণা অনুভূত হতে পারে। এই উপসর্গ বা লক্ষণগুলো ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রমণের তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে দেখা দিতে পারে।

সাধারণত দুই থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত উপসর্গগুলো স্থায়ীভাবে হতে পারে প্রথমবারের ক্ষেত্রে।এই ডেঙ্গুতে দ্বিতীয়বার বা তারও বেশি বার আক্রান্ত হয় তবে এই রোগের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করে। সেই জন্য পূর্বে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অতিরিক্ত সর্তকতা অবলম্বন করে চলতে বলা হয়।

ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে

আমাদের মাঝে অনেকেই জানতে চান যে ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে । আজ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব। মূলত ডেঙ্গু জ্বরের ধরন অনুযায়ী এর স্থায়িত্ব বর্ণনা করা হয়ে থাকে। ডেঙ্গু জ্বরের ধরন নানা রকমের হতে পারে। আর এই ধরন অনুযায়ী এটি কতদিন থাকে তা বলা হয়ে থাকে।এখন ডেঙ্গুর যে ধরন সেটি পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসকরা নানা রকম পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

চিকিৎসকের মতে জ্বর শুরু হওয়ার একবার দুইদিনের মধ্যেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হবে এবং শুরু থেকে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। ডেঙ্গুর উপসর্গ বর্তমানে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।যেখানে শুধু জন্ম নিয়ে রোগীরা হাসপাতালে আসতো এখন দেখা যাচ্ছে যে ডায়রিয়া দিয়েও ডেঙ্গুর লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে। পূর্বের ধারণা অনুযায়ী ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার পাঁচ থেকে ছয় দিন পর রোগীর অবস্থা সংকটা পূর্ণ হতো। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে যে এক বা দুই দিনের জ্বরের পরেই রোগের অবস্থা সংকটপূর্ণ বা অবনতি ঘটছে।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

ডেঙ্গু একটি ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে উৎপন্ন হয়ে থাকে এটি একটি জনপ্রিয় জ্বরের রোগ। ডেঙ্গু জনগণের মধ্যে অত্যন্ত ঊর্ধ্বগতিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং ডেঙ্গু জ্বর বিশেষ করে গরম মৌসুমে অথবা বর্ষা মৌসুমে এর ওপর বৃদ্ধি পায়। এই রোগের উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকলে নির্দিষ্ট উপায়ে উপচার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ডেঙ্গু রোগের ফলে নানা ধরনের উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা দেয়। উপরে আমরা সাধারণ উপসর্গ নিয়ে আলোচনা করেছি । এখন আমরা ডেঙ্গু রোগের মূল লক্ষণ গুলো নিয়ে আলোচনা করব। ডেঙ্গু জ্বরের মূল লক্ষণ গুলো নিচে দেওয়া হল:

আরো পড়ুন: অন্ডকোষ ব্যাথার কারন কি জেনে নিন

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ

ডেঙ্গু রোগের একটি মূল লক্ষণ হল অত্যন্ত উচ্চ জ্বর । এই ঝড়ের সাথে সাধারণভাবে ব্যথা এবং শরীরের অসুস্থ অবস্থা দেখা যায়। ডেঙ্গু রোগের প্লেটলেট সংখ্যা কমে যেতে পারে যার ফলে শরীরে অল্প যত্ন বা শ্রমকে লব্ধির ক্ষতি দেখা যেতে পারে। ডেঙ্গু রোগে অধিক হারে মাথাব্যথা অনুভব করা হতে পারে।ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির অতি দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে পিরিয়ডিক জ্বরের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কিছু ডেঙ্গু রোগী ক্ষতিগ্রস্ত মাংসপেশি ব্যথা এবং মাংসপেশী প্রবৃদ্ধি হয়ে থাকে। কিছু ডেঙ্গু রোগী নিউরোলজি লক্ষণও প্রকাশ পেতে পারে।

ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার

ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় বিশেষ কোন ধরনের ঔষধ বা প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত তৈরি করা সম্ভব হয়নি। গবেষকরা এই ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার বা এর চিকিৎসা ওষুধ সমূহ কে এখন পর্যন্ত গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ ঘরোয়া চিকিৎসাতেই করা হয়ে থাকে এবং এর ফলাফলও ভালো হয়।ডেঙ্গু রোগের মাত্রা অতিরিক্ত ভাবে বৃদ্ধি পেলে আক্রান্ত হওয়ার রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি এবং ডাক্তারি নজরদারিতে রাখা একান্ত জরুরি। হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের শিরায় ইলেকট্রোলাইট তথা লবণ অথবা স্যালাইন দেওয়া হয়ে থাকে। এর ফলে শরীরে প্রয়োজনীয় পানি শূন্যতা এবং লবণের যোগান দিয়ে থাকে।
যেহেতু ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত রোগ সেই কারণে মশার কামড়ের হাত থেকে নিজেকে এবং আক্রান্ত না হওয়া ব্যক্তিকেও বাঁচাতে হবে। এজন্য কিছু কার্যকলাপ করা প্রয়োজন হবে যেমন বাড়ির চারপাশে পানি জমতে দেওয়া যাবে না। জমা পানিতে মশারা বিশেষ করে এডি সমস্যা করে থাকে। পানি জমতে না দিলে মশার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।সপ্তাহে অন্তত একবার পানি জমতে পারে এমন জায়গা পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং ফুলদানি, ফুলের টব, পড়ে থাকা গাড়ির টায়ারে অথবা যন্ত্র তন্ত্রের জমে থাকা পানি ফেলে দিতে হবে। ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস বহনকারী মশা সাধারণত ভোরবেলা এবং সন্ধায় বেশি সক্রিয় থাকে। তাই এই সময়গুলোতে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে

ডেঙ্গু জ্বরে যদি কোন ব্যক্তি আক্রান্ত হয় তবে তাকে কিছু নির্দিষ্ট নিয়মমেনে খাবার খেতে হবে। বিশেষ করে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের জন্য কিছু পুষ্টিকর উপাদান বিশিষ্ট খাবার বিশেষ ভাবে উপকারী হতে পারে। সহজে হজম হয়না এমন খাবার গ্রহণ থেকে ডেঙ্গু রোগীদের বিরত থাকাটাই শ্রেও।ডেঙ্গু জ্বর হলে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বেশি গ্রহণ করতে হবে। তার সাথে জিংক জাতীয় খাবার যেমন বাদাম খেতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রয়োজনে মাছ, মাংস, ডাল, সবজি, ফলমূল, ডাবের পানি সহ সুষম খাদ্য খেতে হবে।ডেঙ্গু রোগের শরীর থেকে ইলেকট্রোলাইট হারিয়ে যায়। অটোলাইট সাচের জন্য স্পেশাল কিছু ড্রিংক বা ইলেকট্রোলাইট সাপ্লিমেন্ট সেবন করার খুবই উপকারী। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির পর্যাপ্ত আরাম এবং শুষ্ক খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়াও ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য দুধ এবং ডাব খাওয়া উচিত যা শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম প্রদান করে।ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিদের ডায়েট পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার দ্বারা পরিপূর্ণ থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে এবং চিকিৎসকের দেওয়া পরামর্শ এবং নির্দেশনা গুলো অনুসরণ করে চলতে হবে।

শেষ কথা

বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বর একটি সাধারন রোগে পরিণত হয়েছে। সাধারণ রোগ হওয়ার ফলে যদি এই রোগকে অবহেলা করা হয় তাহলে ডেঙ্গু একটি মারাত্মক রোগে পরিণত হতে পারে। তাই সকলকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে বিশেষ করে যাদের ডেঙ্গু পূর্বে হয়েছে তাদের অতিরিক্ত সতর্কতা থাকতে হবে। কারণ দ্বিতীয় বার ডেঙ্গুর সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে।তাই সব সময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

আজ আমরা এই আর্টিকেল মাধ্যমে আপনাকে জানানোর চেষ্টা করেছি ডেঙ্গু কি, ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার, ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে, ডেঙ্গু উপসর্গ গুলো কি কি, ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে ইত্যাদি আরো নানারকম বিষয় সম্পর্কে।আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

এই ধরনের আরও আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট প্রতিনিয়ত ভিজিট করুন। এতক্ষণ পাশে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সুস্থ থাকবেন ভালো থাকবেন এই আশা রেখে শেষ করছি আজ এই পর্যন্তই আল্লাহ হাফেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *