অনেকেই অনিয়মিত মাসিক বা পিরিয়ড এর মত সমস্যায় ভোগেন । তারা নিশ্চয়ই মাসিক বা পিরিয়ডের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার উদ্দেশ্যে অনিয়মিত মাসিকের ঔষধ সেবন করতে চান। আপনি যদি অনিয়মিত মাসিক এর সমস্যার মধ্যে পড়ে থাকেন তাহলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার নানা রকম ঘরোয়া উপায় সমূহ আজকের এই পোস্টে জানানো চেষ্টা করব।

পোস্ট সূচিপত্র: প্রিয় পাঠক আজ আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব অনিয়মিত মাসিকের কারণ সমূহ গুলো কি কি? অনিয়মিত মাসিক বা পিরিয়ডের লক্ষণ গুলো কি কি? তার সাথে আরো জানানোর চেষ্টা করব নিয়মিত মাসিকের জন্য কোন ওষুধ গুলো সেবন করতে হবে এবং এর থেকে মুক্তির উপায় সমূহ গুলো কি কি? এই সম্পর্কে জানতে হলে অবশ্যই সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

অনিয়মিত মাসিক কি?

মাসিক বা পিরিয়ড একজন নারীর জন্য খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার। কিন্তু যদি এই পিরিয়ড বা মাসিক আপনার ঋতুস্রাবের মধ্যে ব্যবধান পরিবর্তিত হতে দেখা দেয় তবে আপনার অনিয়মিত মাসিক হয়েছে বলে ধরা যায়। আপনার যদি অনিয়মিত মাসিক বা পিরিয়ডের মত সমস্যা দেখা দেয়। তবে এই সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনাকে কিছু ঔষধ সেবন করতে হতে পারে।
যার মাধ্যমে আপনার মাসিক স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সহায়তা করতে পারে। যদিও পিরিয়ড বা মাসিক একটু তাড়াতাড়ি কিংবা দেরিতে হওয়ার স্বাভাবিক একটি অবস্থা । অনিয়মিত মাসিক সমস্যায় আপনি যদি ভোগেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই কিছু বিষয়ের উপর নজর দিতে হবে তা না হলে আপনি বড় কোন সমস্যাই পরতে পারেন। আর তাই অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

অনিয়মিত মাসিকের কারণ

নানা কারণে আপনার অনিয়মিত মাসিক বা পিরিয়ড হতে পারে। অনিয়মিত মাসিকের প্রধান বা অন্যতম কারণ হচ্ছে শরীরের হরমোন এর পরিবর্তন। যদি প্রাকৃতিক হরমোনের পরিবর্তন সাধিত হয় তাহলে অনেক সময় অনিয়মিত পিরিয়ডের সম্মুখীন হতে হয়। আর এই প্রাকৃতিক হরমোন গুলোর মধ্যে রয়েছে ইস্ট্রোজেন, ফলিকলস্ট্রিমুলেটিঙ্গ এবং প্রোজেস্টরেন। এই হরমোন গুলো প্রত্যেকের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় বিদ্যমান থাকে।যদি কোন কারণে এই হরমোনগুলোর স্বাভাবিক অবস্থার পরিবর্তন সাধিত যেমন স্বাভাবিক উত্থান ও পতনের মধ্যে ব্যাঘাত সৃষ্টি করার মাধ্যমে ও নিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে। এছাড়াও বয়ঃসন্ধিকাল চলাকালিন সময় গুলোতে অনিয়মিত পিরিয়ড বা মাসিক হওয়া সাধারণ একটি ব্যাপার কারণ এই সময় গুলোতে স্বাভাবিকভাবে শরীরে নানা রকম পরিবর্তন হয়। যার কারণে এই সময়গুলোতে অনেকেরই পিরিয়ড বা মাসিক দীর্ঘতর হতে থাকে এবং অনিয়মিত ভাবে ভূতে থাকে।
উপরোক্ত কারণগুলো ছাড়াও অনিয়মিত পিরিয়ড গর্ভাবস্থা এর সাথে সম্পর্কিত নানারকম জটিলতার কারণেও হতে পারে। এছাড়াও আরও কারণে অনিমিত মাসিক হতে পারে যেমন রক্তপাতের ব্যাধির কারণে, মানসিক চাপের মধ্যে দীর্ঘ অবস্থা বিরাজ করলে, নানা রকম অসুস্থতার মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করলে, শরীরচর্চা অথবা ব্যায়াম করার স্বাভাবিক রুটিন যদি কোন কারণে পরিবর্তন আসে তাহলে এর ফলেও অনিয়মিত মাসিক দেখা দিতে পারে । এছাড়াও জন্মনিয়ন্ত্রণ কিংবা গর্ভনিরোধক বেশি পরিমাণ ব্যবহার করলে অনিয়মিত মাসিক দেখা দিতে পারে। আবার যদি অতিরিক্ত হারে যদি শরীরের ওজন বৃদ্ধি পাই অথবা কমে যায় তাহলেও অনিয়মিত মাসিক দেখা দিতে পারে।

অনিয়মিত মাসিকের লক্ষণ

পিরিয়ড বা মাসিক এক ধরনের স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় কার্যপ্রক্রিয়া। যা একজন নারীর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরে নিয়মিতভাবে প্রতিমাসে নির্দিষ্ট সময়ে হয়ে থাকে। কিন্তু অনেকাংশে দেখা যায় যে পিরিয়ড প্রতিমাসের সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হয় না। যার ফলে এটাকে অনিয়মিত মাসিক হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। আর এই অনিয়মিত মাসিকের কারণে অনেক নারীর মাঝেই খুব হতাশা এবং উদ্যেগ কাজ করে।
পিরিওড বা মাসিক এক ধরনের চক্রের আকারে সাধন হয়ে থাকে যেখানে মাসিকের প্রথম দিন থেকে পরবর্তী মাসিকের প্রথম দিন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে। সাধারণত একটি পিরিয়ড চক্র বা মাসিক চক্র গড়ে ২৮/২৯ দিন সময় পর পর সম্পূর্ণ হয়ে থাকে। তবে এটি একেকজনের একেক রকম হতে পারে। আর এই কারণে কারও আগে হতে পারে অথবা কারো পরে হতে পারে।
তবে পিরিয়ড যদি ২৫ থেকে ৩৮ দিনের মধ্যে শুরু হয়ে যায় তাহলে এটিকে নিয়মিত পিরিয়ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু যদি মাসিক এই সময়ের মধ্যে শুরু না হয় তাহলে তখন তাকে অনিয়মিত পিরিয়ড বা মাসিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। আর এই অনিমিত মাসিকের নানারকম লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া যায়। যার মধ্যে প্রধান লক্ষণটি হল মাসিক চক্র ৩৫ দিনের বেশি হওয়া এবং তার পাশাপাশি ঠিকভাবে রক্তক্ষরণ না হওয়া।

অনিয়মিত পিরিয়ড ঠিক করার উপায়

অনিয়মিত পিরিয়ড ঠিক করার জন্য নানা রকম পদ্ধতিতে অবলম্বন করতে পারেন। যার মধ্যে একটি হলো আদা ব্যবহার করা। আদা মাসিক চক্র কে নিয়মিত করতে খুবই কার্যকরী। এক্ষেত্রে আধা কে কুচি করে এক কাপ পানিতে এক বা দুই চা চামচ আদা দিয়ে ছয় থেকে সাত দিন সেদ্ধ করে নিতে হবে আপনি ইচ্ছা করলে এর সাথে চিনি মিশিয়ে নিতে পারেন। আর এভাবে আপনি তিন বেলা খাবার খাওয়ার পর এটিকে পানি করুন।
নিয়মিত এটি পান করলে আপনার মাসিক চক্রটির ঠিক হয়ে যাবে। এছাড়াও অনিয়মিত পিরিয়ড কে ঠিক করার জন্য তিল খুবই সাহায্য করে একটি উপকরণ। তিলের মধ্যে বিদ্যমান উপাদান গুলো হরমোন উৎপাদন করতে সাহায্য করে থাকে। কিন্তু তিল খাওয়ার জন্য কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় এক্ষেত্রে কিছু পরিমাণ তেল ভেজে নিতে হবে এবং তা গুড়ো করে তার সাথে এক চা চামচ গুড় মেশিয়ে নিতে হবে। আর এই মিশ্রণটি প্রতিদিন খালি পেটে এক চামচ করে খেতে হবে।
আর এই পদ্ধতিতে অবলম্বন করলে আপনার অনিয়মিত মাসিক ঠিক হয়ে যাবে। এছাড়াও অনিয়মিত মাসের ঠিক করার জন্য আপনি আপেল সাইডার ভিনেগার খেতে পারেন। পেলে সাইডার ভিনেগার এক চা চামচ পরিমাণ পানিতে মিশিয়ে খাবার খাওয়ার আগে পান করুন। আর এর মাধ্যমে এটি আপনার রক্তের ইনসুলিন ও ব্লাড সুগারকে কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। এর ফলে অনেক পিরিয়ড নিয়মিত হতে শুরু করে।

অনিয়মিত মাসিকের জন্য কোন ঔষধ ভালো – অনিয়মিত মাসিকের ঔষধ

অনিয়মিত মাসিকের জন্য বর্তমানে নানা রকম ঔষধের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই ব্যবহৃত ঔষধের মধ্যে কিছু ঔষধ এর নাম আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে মাসিক নিয়মিত করার জন্য Renata Ltd. এ কোম্পানীর প্রচলিত এক মেডিসিনের নাম হলো Normens 5 mg. এই মেডিসিন শরীরের প্রাকৃতিক হরমোন এর ওপর কাজ করে থাকে এবং তার পাশাপাশি অনিয়মিত মাসিক থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে থাকে।
অনিয়মিত মাসিকের জন্য আপনি হোমিও ঔষধ খেতে পারেন। হোমিও ঔষধ গুলো আপনার শরীরে ধীরে ধীরে কাজ করে থাকে। যদি আপনার মাসিক প্রায় সময়ই অনিয়মিত হয় এবং অনেক দেরিতে হয় তার পাশাপাশি মাসিক শুরু হওয়ার আগে অভারিতে ব্যথা হওয়ার ক্ষেত্রে আপনি যানোসিয়া আসোকা (Janosiya Ashoka) সেবন করতে পারেন। আর এর সেবনের মাধ্যমে আপনার অনিয়মিত মাসিক ঠিক হয়ে যাবে।

অনিয়মিত মাসিকের ঘরোয়া চিকিৎসা

আপনি যদি মনে করেন এ অনিয়মিত মাসিক ওষুধ সেবন করে নয় বরং ঘরোয়া উপায়ে ঠিক করতে চান তাহলে আপনি করতে পারেন। এক্ষেত্রে কিছু ঘরোয়া উপায় আজ আপনাকে জানানোর চেষ্টা করব। যেটি ব্যবহার করলে আপনার অনিয়মিত মাসে ঠিক হয়ে যাবে। অনিয়মিত মাসিক ঠিক করার জন্য আপনি দারচিনিগুলো ব্যবহার করতে পারেন। দারচিনির সঙ্গে আমরা কম বেশি অনেকেই পরিচিত। রান্নার মসলা হিসেবে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
কিন্তু দারচিনি পলিস্টিটিক ওভারের জটিলতাগুলো কমাতে, মাসিকের সময় এবং বমি বমি ভাব দূর করতে এবং তার পাশাপাশি যন্ত্রণাদায়ক রক্তপাত কমিয়ে আনতে অত্যন্ত কার্যকর। অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করতেও দারচিনি কাজ করে থাকে। এছাড়াও পিরিয়ড নিয়মিত করতে জিরা অনেক কার্যকর। আর জিরা খাওয়ার মাধ্যমে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। এক্ষেত্রে একটি পদ্ধতি অবলম্বন করে খেতে হয় ।
প্রথমে এক গ্লাস পানিতে ১/২ চা চামচ জিরা মিশ্রণ করে এটিকে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হয়। আর সকালে ঘুম থেকে উঠে এই জিরা মিশ্রিত পানি পান করতে হবে। যদি আপনি নিয়মিত এটি সেবন করতে পারেন তাহলে এটি অনেক সুফল হবে আপনার জন্য। এছাড়াও অনিয়মিত মাসিক ঠিক করার জন্য আপনাকে অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড বা ফাস্টফুড নানা রকম অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এটা শরীরের অস্বাভাবিক হারে ওজন বৃদ্ধি করে তার পাশাপাশি পিরিয়ডের সমস্যা বৃদ্ধি করে থাকে। তাই এটি পরিহার করতে হবে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আজ আপনাদের কে জানানোর চেষ্টা করেছি অনিয়মিত মাসিকের কারণ ও প্রতিকার গুলো কি কি, অনিয়মিত মাসিক ঠিক করার উপায় সমূহ গুলো কি কি, অনিয়মিত মাসিক কেন হয় অনুমিত মাসিকের লক্ষণ গুলো কি কি সহ আরো নানা তথ্য তুলে ধরার। আপনি যদি এই পোস্টটি পড়ে উপকৃত হন তাহলে অবশ্যই আপনার প্রিয়জনদের সাথে এটি শেয়ার করবেন এবং এই ধরনের আরো তথ্যমূলক ব্লক পোস্ট পড়তে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন ধন্যবাদ। আসসালামুয়ালাইকুম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *