আসসালামু আলাইকুম আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি। আজকের আলোচ্য বিষয়বস্তু হলো জন্ডিস এর লক্ষণ কি, জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা সমূহ এই বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করব ইনশাআল্লাহ।জন্ডিস এর লক্ষণ কি, জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা সমূহ জানতে হলে আমাদের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

প্রিয় পাঠক আপনি নিশ্চয়ই জন্ডিস এর লক্ষণ কি এবং জন্ডিস থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় সমূহ সম্পর্কে জানতে চান। নিচের এ আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব জন্ডিসের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে। কিভাবে জন্ডিস থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায় সে সম্পর্কে আমাদের এই আর্টিকেলের জানানো হবে। তার সাথে আরও জানানো হবে জন্ডিসের চিকিৎসা সম্পর্কে এবং জন্ডিস হলে কি কি খাবার খেতে হয় সেই সম্পর্ককে। তাই আমাদের পুরো আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পারবেন।

জন্ডিস কাকে বলে

জন্ডিস হলো এক প্রকারের লিভার বা যকৃতের রোগ। সহজ ভাবে বলতে গেলে জন্ডিস এমন একটি রোগ যার ফলে অতিরিক্ত উচ্চমাত্রায় বিলিরুবিনের কারণে ত্বক এবং চোখের সাদা অংশ এবং মিউকাস মেমব্রেন এর প্রায় হলদেটে ভাব হয়ে যাওয়া। বিলিরুবিন হল আমাদের রক্তের লোহিত কণিকা ভেঙ্গে গিয়ে তৈরি একপ্রকারের রাসায়নিক উপাদান।

এই বিলিরুবিন আমাদের লিভারে গিয়ে পিওতে পরিণত হয়ে থাকে। পিউ লিভার থেকে বের হয়ে যায় বলে আমাদের জন্ডিসে আক্রান্ত হতে হয় না। এজন্য যদি কোন কারণে লহিত কণিকা বেশি পরিমাণে ভেঙে বিলিরবিন তৈরি হয়। আর এই বিলিরুবিন যদি লিভারে পিইউতে পরিণত না হতে পারে অথবা পিউ লিভারে তৈরি হলো ঠিক কিন্তু বের হবার রাস্তায় কোন বাধা থাকলে জন্ডিস হয়ে থাকে।

জন্ডিস এর লক্ষণ কি?

জন্ডিস হলে আমাদের শরীরে নানা রকমের লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। জন্ডিস রোগীদের প্রথমে যেটা লক্ষণ পায় সেটা হল শরীরে হালকা জ্বর আসে, মুখে অরুচি কোন খাবার খেতে পারে না এবং বমি বমি ভাব হওয়া বা বোন হওয়া এগুলো দিয়ে জন্ডিস টা প্রথমে শুরু হয়। পরবর্তী পর্যায়ে আস্তে আস্তে আরো নানা লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে।

জন্ডিসের কারণে ত্বক জিব্বা এবং চোখের সাদা অংশ গুলো হলুদ হয়ে ছোপ ছোপ আঁকা ধারণ করে। গারো হলুদ রঙের প্রস্রাব নিঃসৃত হয়ে থাকে। এছাড়াও যকৃতে তীব্র ব্যথা হওয়া, খিদে কমে যাওয়া, গা গুলানো অত্যন্ত দুর্বলতা অনুভব করা এবং তীব্র কষ্ট কাঠিন্য হওয়া। শরীরের চুলকানি দেখা দেওয়া, মুখে তেতো তেতো ভাব হওয়া এবং তার সাথে জ্বর ও মাথাব্যথা শুরু হওয়া।

পরবর্তী পর্যায়ে অনুসারে আস্তে আস্তে প্রস্রাব করার সময় হলদেটে ভাব হয়ে যায় তারপরে চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া। পরবর্তীতে এক সময় দেখা যায় যে জ্বরটা স্বাভাবিকভাবে কমে গেলে কোন খেতে পারেনা গন্ধ গন্ধ ভাব করা এবং চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া ও প্রস্রাব হলুদ হয়ে যাওয়া বিদ্যমান থেকে যায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে জন্ডিস আক্রান্ত রোগীর চুলকানি বেড়ে যায় এটা বিশেষভাবে যখন জন্ডিস অনেকদিন ধরে স্থায়ী হয়।

সাধারণভাবে একজন মানুষের জন্ডিসের লক্ষণগুলো দুই থেকে চার সপ্তাহ নাগাদ থাকতে পারে। এক্ষেত্রে সাধারণভাবে তিন সপ্তাহের মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে জন্ডিস গুলো ভালো হয়ে যায় কিন্তু যদি দেখা যায় জন্ডিস চার সপ্তাহ পার হয়ে গেছে অথবা এর অধিক হয়ে গেছে তখন এটিকে সাধারণ জন্ডিস বলা যাবে না কারণ এটিকে তখন অন্য কোন কারণে জন্ডিস বা খারাপ কোন কারনে জন্ডিস হয়েছে বলে মনে করা হয়।

এই কারণে কারো জন্ডিস হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে ভালো না হলে আপনারা অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। জন্ডিসের নানা রকমের ধরন রয়েছে। আর এই ধরনের আমাদের শরীরে স্থায়ী হতে পারে। কারণ যে জন্ডিস চার সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায় এটাকে বলা হয় নরমাল জন্ডিস আর যদি না হয় চার সপ্তাহের অধিক সময় থাকে তখন এটাকে বলা হয় সেকেন্ডারি লেভেলের জন্ডিস।

জন্ডিস থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়

জন্ডিস রোগ আমাদের শরীরের জন্য খুবই ভয়ংকর। আমাদের শরীরে জন্ডিসের কারণে নানা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে এবং এর মধ্যে অবশ্যই অন্যতম কিছু লক্ষণ উপরে আমরা আলোচনা করেছি। এখন আমরা আলোচনা করব জন্ডিস থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় গুলো কি কি। এক্ষেত্রে কয়েকটি উপায় জন্ডিস থেকে মুক্তি পাওয়ার চিকিৎসা করা দরকার।

জন্ডিস হলে আমাদের সব সময় লিভারের প্রতি বাড়তি খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য লিভারের প্রতি যত্নবান হতে হলে বেশি বেশি করে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। বেশি পরিমাণে পানি পান করলে আমাদের শরীর থেকে টক্সিন সহজে বেরিয়ে যেতে পারে। তারপরে বেশি পরিমাণে আখের রস খাওয়া। আখের রসের মাধ্যমে জন্ডিসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের আখের রস না খাওয়ায় শ্রেয়।

আরো পড়ুনঃ টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার – টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত

আপনি যদি প্রতিদিন কফি বা চা খেতে পারেন তাহলে লিভারের সমস্যা থেকে অনেকাংশে রক্ষা পেতে পারেন। কপি ও চায়ের মধ্যে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট যার ফলে লিভারের সমস্যা কমাতে সহায়তা করে। পাশাপাশি এই হারবাল টি পাম্প করলেও অনেকটাই সমস্যা দূর হতে পারে। তাই এ ধরনের পানীয় পান করা জরুরী।

জন্ডিসের চিকিৎসা – জন্ডিস এর প্রতিকার

জন্ডিস থেকে মুক্ত পাওয়ার জন্য আপনাকে সব সময় বিশুদ্ধ খাদ্য এবং পানি পান করতে হবে। তার সাথে শরীরে রক্ত নেওয়ার দরকার হলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং করে নিতে হবে। সিরিঞ্জ শরীরে ব্যবহার করা জরুরী সে ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস বিয়ের টিকা আপনাকে নেওয়া দরকার।

আমাদের দেহে যখন বিলিরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। সেই মুহূর্তে আমাদের শরীরে জন্ডিস এর মত রোগ দেখা দেয়। যদি ১০ থেকে ২০ দিনের মধ্যে রক্তের এই বিলুরুবিনের পরিমাণ স্বাভাবিক অবস্থায়ই চলে আসে তাহলে সাধারণভাবেই ভালো হয়ে যেতে পারে। সেজন্য আপনার প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম। এই বিশ্রামী হলো জন্ডিসের মূল চিকিৎসা।

জন্ডিসের চিকিৎসা সাধারণত নির্ভর করবে ঠিক কি কারণে জন্ডিস হল তার ওপর। এজন্য জন্ডিসের উপসর্গ বা লক্ষণ গুলো দেখা দিলে অবশ্য একজন লিভার বিশেষজ্ঞর পরামর্শ অনুযায়ী আপনাকে চিকিৎসা নিতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আপনার শরীরের লক্ষণ এবং রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জন্ডিসের তীব্রতা ও কারণ সমূহ গুলোকে নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেবেন।

জন্ডিস হলে কখনোই ডিম খাওয়া যাবেনা। কারণ ডিম খেলে জন্ডিসের মাত্রা বেড়ে যায়। এর পাশাপাশি ডিমের প্রভাবে আমাদের শারীরিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই জন্ডিস হলে আপনি ডিম পরিহার করে চলাই ভালো যতদিন না আপনার জন্ডিস রোগ ভালো না হয়। শিশুদের জন্ডিস হলে অনেক সময় হাসপাতালে ভর্তি করে বিভিন্ন থেরাপিও করতে হতে পারে।

জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা

জন্ডিস হলে সাধারণত এমন খাবার খাওয়া উচিত যাতে যকৃত কিংবা পাকস্থলের ওপর কোন প্রকার চাপ না পড়ে। আপনাকে অল্প করে কিছুক্ষণ পরপর সঠিক খাবারগুলোকে গ্রহণ করতে হবে এবং তার সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে। তাহলে জন্ডিস খুব তাড়াতাড়ি নিরাময় করা সম্ভব হতে পারে।

জন্ডিস হলে যেসব খাবারগুলো বেশি পরিমাণে খাবেন তার মধ্যে রয়েছে প্রোটিন জাতীয় খাবার। এই প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন মাছ, মাংস, ডাল ইত্যাদি পরিমাণ মতো খেতে হবে। আর যদি প্রোটিন জাতীয় খাবার কম পরিমাণে খাওয়া হয় তাহলে রোগে দুর্বল হয়ে পড়বে। আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে প্রোটিন আমাদের শরীরের শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।

প্রোটিন জাতীয় খাবারের পাশাপাশি বেশি পরিমাণে শাকসবজি জাতীয় খাবার খেতে হবে। শাকসবজি খাওয়া জন্ডিস রোগীর জন্য খুবই কার্যকর একটি পদ্ধতি। শাক-সবজি খাওয়ার পাশাপাশি জন্ডিস রোগীদের বেশি পরিমাণে ফল যেমন আনারস, পেঁপে, তরমুজ, কলা, কমলা আঙ্গুর, আপেল, পেয়ারার এজাতীয় সহজপাচ্য খাবারগুলো নিয়মিত খেতে হবে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক জন্ডিস এর লক্ষণ কি? জন্ডিসের চিকিৎসা, জন্ডিস এর প্রতিকার, জন্ডিস থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় সমূহ কি কি সেই বিষয়ে একটি বিস্তারিত আলোচনা আপনার মাঝে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে 

তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এই ধরনের আরও আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট প্রতিনিয়ত ভিজিট করুন। এতক্ষণ পাশে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সুস্থ থাকবেন ভালো থাকবেন এই আশা রেখে শেষ করছি আজ এই পর্যন্তই আল্লাহ হাফেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *