আসসালামু আলাইকুম আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি। আজকের আলোচ্য বিষয়বস্তু হলো দাঁত ব্যথা হলে করণীয়, দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় সমূহ এই বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করব ইনশাআল্লাহ। দাঁত ব্যথা হলে করণীয়, দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় সমূহ জানতে হলে আমাদের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

আজ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করব দাঁত ব্যথা কেন হয়, দাঁত ব্যথা হলে করণীয়, দাঁত ব্যথা কমানোর উপায় সমূহ গুলো কি কি? তাদের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো কি কি এবং তার সাথে আরো জানানোর চেষ্টা করব দাঁত ব্যথা দোয়া সমূহ কি কি? দাঁতের মাড়ি ব্যথা করে কেন? এই সকল বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জানতে হলে আমাদের পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

ভূমিকা

দাঁত আমাদের শরীরের একটি বিশেষ অঙ্গ। দাঁত আমাদের খাদ্য কর্তন ও চর্বনের কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তা আজ মানুষের মুখে অবস্থিত একটি শক্ত অঙ্গ। বেশিরভাগ মেরুদন্ডী প্রাণীদেহে সবচেয়ে শক্ত অঙ্গ হচ্ছে দাঁত। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির মুখগহ্বরের ওপরে এবং নিচের চোয়ালে সাধারণত ১৬ টি করে মোট ৩২ টি দাঁত থাকতে পারে। আজ আমাদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। কারণ যদি দাঁত না থাকতো তাহলে আমরা কোন শক্ত খাবার ঠিকমতো খেতে পারতাম না। তাই দাঁতের পরিপূর্ণ যত্ন নেওয়া উচিত।

দাঁত ব্যথা কেন হয়- দাঁতের মাড়ি ব্যথা করে কেন

দাঁত এমন একটা জিনিস যার ব্যথা শুরু হলে সহ্য করা খুবই কষ্টসাধ্য। দাঁত ব্যথা কখনো উপেক্ষা করা উচিত নয়। দাঁত নানা কারণে ব্যথা হতে পারে। আর যদি দাঁতের ব্যথা এর ক্ষয়জনিত কারণে হয় তাহলে এর আরো খারাপ দিকে যেতে পারে যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেওয়া না হয়। দাঁত ব্যথা খেয়ে সাধারন তো মারক হিসেবে ধরা হয়ে থাকে না।

এ ক্ষেত্রে তেমন কোন প্রমাণ ও পাওয়া যায়নি তবে কিছু ক্ষেত্রে এগুলোকে গুরুতর ভাবে কোন শারীরিক অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে যার জন্য সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। দাঁত ব্যথা সাধারণত মাঝারি অবস্থা বিদ্যমান থাকে তবে এর গুরুতর অবস্থায়ও যেতে পারে।কখনো এটি স্বল্প সময়ে ভালো হয়ে যায় আবারও এটি দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হয় এছাড়াও কখনো বা মাঝেমধ্যে আসে।

যদি তাতে কোন গর্ত বা ক্যারেজ হয়ে থাকে অথবা দাঁতের ফিলিং খুলে যাওয়ার কারণে ও দাঁত ব্যথা শুরু হতে পারে। এছাড়াও যদি কোন কারনে দাঁত ভেঙ্গে যায় সে ক্ষেত্রেও দাঁত ব্যথা শুরু হয়। আবার যদি দাঁতের শ্বাস বা পালস যে কোন কারনে ক্ষতিগ্রস্ত বা আক্রান্ত হয় সে ক্ষেত্রেও দাঁত ব্যথা শুরু হতে পারে।

বাড়িতে ব্যাথার কারণেও সাধারণত দাঁত ব্যথা হয়ে থাকে। যদি কোন গরম বা ঠান্ডা খাবার খাওয়ার পর আধাঘন্টা বা ৩০ মিনিট পর্যন্ত দাঁতের ব্যথা স্থায়ী হয় তবে ধারণা করার চাই যে দাঁতের শ্বাস বা পালপ আক্রান্ত হওয়ার ফলে ব্যথা হচ্ছে। আমরা অনেক ক্ষেত্রে দাঁত পরিষ্কার বা দাঁত ব্রাশ করার সময় ভুল ভাবে বা ভুল প্রক্রিয়া ব্রাশ করে থাকে।

আর এই ভুল ভাবে দাঁত ব্রাশ করার কারণে ও দাঁত ব্যথা শুরু হতে পারে। এছাড়া ও দাঁত ব্রাশ করার সময় যদি শক্ত ব্রাশ দিয়ে দাঁত যার কারণে ও দাঁতের মাড়ি ব্যথা করে আবার অনেকে বিভিন্ন ধরনের কোল্ড ড্রিংকস পান করে থাকে কিন্তু তাদের দাঁতের মাড়ি সেনসিটিভ হওয়ার কারণে তাদের মাড়ি ব্যথা শুরু করে থাকে।

এছাড়াও আমরা অনেক সময় দাঁতের নানা রকম চিকিৎসা করিয়ে থাকি। কিন্তু এর চিকিৎসা যদি ভুল চিকিৎসা হয় তবে ভুল চিকিৎসা করার কারণে তাদের মাড়ি ব্যথা আরো বেশি হয়ে যেতে পারে। সর্বক্ষণ বলা যায় আমাদের বিভিন্ন ভুল কর্মকান্ডের কারণে দাঁতের ব্যথা হয়ে থাকে। তাই আমাদেরকে দাঁতের প্রতি যত্নশীল হতে হবে এবং দাঁতের ব্যথায় কি করনীয় এ বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে।

দাঁত ব্যথা হলে করণীয় – দাঁত ব্যথার চিকিৎসা

দাঁত ব্যথার জন্য অবশ্যই চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। দাঁত ব্যথাকে অবহেলা করা মোটেই ঠিক কাজ নয়। কারণ এর ফলে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। দাঁত ব্যথার জন্য বেশিরভাগ লুকিয়ে দাঁতের চিকিৎসকের কাছে গিয়ে থাকেন যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যথা রোগীর দাঁতের সমস্যার কারণে ঘটে।

এজন্য দাঁতের ক্ষয় বা দাঁত সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যা গুলি সনাক্ত করতে দাঁত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এক্স-রে অথবা দাঁতের অন্যান্য শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এগুলো ছাড়াও সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য চিকিৎসকেরা আক্রান্ত রোগীকে পেইন কিলার অথবা ব্যথার ওষুধ এন্টিবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

যদি দাঁত ব্যথা দাঁত ক্ষয়ের কারণে হয় তবে চিকিৎসকেরা একটি ড্রিল দিয়ে দাঁতের সেই ক্ষয়গুলো দূর করে থাকেন। তার পাশাপাশি দাঁতের কিছু উপকরণ দিয়ে সেই ফাঁকা স্থানটি পূরণ করে থাকেন। এছাড়াও কোন কোন রোগীদের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত দাঁতটিকে উঠানোর প্রয়োজন পড়তে পারে যেটা কিনা একজন চিকিৎসক অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে করে থাকে।

যদি দাঁতের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া জমার কারণে দাঁত ব্যথা শুরু হয় তবে এক্ষেত্রে কিছু করণীয় রয়েছে। সেটি হল দাঁতের ব্যথা কমাতে লবণ এবং লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে যদি দাঁতের ব্যথাকৃত অংশে লাগিয়ে রাখতে পারেন তাহলে দাঁতের ব্যথা অনেকাংশই ভালো হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যবহার করার নিয়ম হচ্ছে প্রথমে হালকা পরিমাণ লবণ নিতে হবে।

আরো পড়ুনঃ কোমর ব্যথা কেন হয় এবং কোমর ব্যথা হলে করণীয় কি

এরপরে এক দুই চামচ পরিমাণ লেবুর রস তার সাথে মিশিয়ে সুন্দরভাবে তাতে যেখানে ব্যথা হচ্ছে সেই স্থানে ভালোভাবে লাগাতে হবে। আর এইভাবে কয়েকবার ব্যবহার করলে দাঁতের ব্যথা বা বাড়ির ব্যথা কমে যাবে। দাঁত ব্যথা কমাতে আরেকটি উপকারী পদ্ধতি হলো পেয়ারা পাতা ব্যবহার করা। দাঁতের ব্যথা ভালো করার জন্য পেয়ারা পাতা খুবই কার্যকরী।

পেয়ারা পাতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে দাঁতের যে স্থানে ব্যথা হচ্ছে সেখানে পেয়ারা পাতা দিয়ে লাগিয়ে রাখতে পারেন। তাহলে খুব নিমিষেই দাঁতের ব্যথা ভালো হয়ে যাবে। এছাড়াও দাঁতের ব্যথা ভালো করার জন্য পেঁয়াজ ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে যেখানে দাঁতের ব্যথা হচ্ছে সেই স্থানে কাঁচা পেঁয়াজ একটু থেতলে নিয়ে ব্যথাকৃত স্থানে চেপে ধরে রাখতে হবে।

দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায়

দাঁত ব্যথা কমানোর জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে আর এই উপায় গুলো ব্যবহারের মাধ্যমে দাঁতের ব্যথা ভালো করতে পারেন খুব সহজে। হঠাৎ করে দাঁতের ব্যথা শুরু হলে দাঁতের ব্যথা কমানোর জন্য ঘরোয়া উপায় গুলো খুবই কার্যকরী একটি পদ্ধতি। তবে অনেকেই জানে না যে দাঁত ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো কি কি? কিন্তু ঘরোয়া উপায় গুলো যারা থাকলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে দাঁতের ব্যথা ভালো করা সম্ভব।

দাঁতের ব্যথা নিরসনের জন্য ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে একটি হলো লবঙ্গ এবং গোল মরিচের সমন্বয়ে পেস্ট তৈরি করন। এই গোলমরিচ ও লবঙ্গএর সমন্বয়ে তৈরিকৃত পেজটি যদিদাঁতের যে স্থানেব্যথা অনুভূত হচ্ছে সেখানেলাগিয়ে রাখতে পারেন তবেদাঁতের ব্যথা অনেকাংশেকমে যেতে পারে। যদি এটির ব্যবহারে দাঁতের ব্যথাকমে যায় সে ক্ষেত্রেও আপনি এরপেস্টব্যবহার করতে পারেন।

দাঁতের ব্যথা নিরসনের জন্য ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে আরেকটি হলো রসুন এর ব্যবহার। রসুন আমাদের দাঁতের ব্যথাভালো করার জন্য খুবই উপকারী। রসুন যেহেতু একটি মসলা জাতীয় উপাদান সেজন্য এটা আমাদের সবারই বাসায় কম বেশি থাকে। দাঁতের ব্যথা ভালো করার জন্য রসুন কে প্রথমে থেতলে নিতে হবে এবং দাঁতের যে স্থানে ব্যথা সেখানে লাগিয়ে রাখতে হবে । আর এই পদ্ধতি অবলম্বন করে দাঁতের কমাতে সাহায্য করবে।

দাঁতের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে আরেকটি সেরা উপায় হল ভ্যানিলার নির্যাস ব্যবহার করা। ভ্যানিলার নির্যাস দাঁতের ব্যথার জায়গায় লাগিয়ে রাখতে পারলে খুব সহজে ব্যথা ভালো করা সম্ভব। ভ্যানিলা নির্যাস যেভাবে দাঁতের ব্যথার স্থানে লাগাবেন এক্ষেত্রে প্রথমে হালকা পরিমাণ পরিষ্কার তুলা নিতে হবে এবং তার সাথে ভ্যানিলা নির্যাস লাগিয়ে সেটা দাঁতের ব্যথা স্থানে লাগিয়ে রাখতে হবে আর এভাবে দাঁতের ব্যথা ভালো হয়ে যাবে।

দাঁত ব্যথা কমানোর দোয়া

বিভিন্ন কারণে মানুষের শরীরের নানা স্থানে ব্যথা হতে পারে। আর এসব ব্যথা এর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে দাঁতের ব্যথা। কারণ দাঁতের ব্যথা আমাদের মস্তিষ্কে আঘাত আনে। আর এই ব্যথা দূরীকরণে আমরা নানা রকম পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকি। আমাদের যেকোনো সমস্যার সমাধানের উপায়গুলো পবিত্র আল কোরআনের মাধ্যমে পেতে পারে।

এই কারণে আপনি যদি সেই সব উপায়গুলো অবলম্বন তাহলে খুব সহজেই দাঁত ব্যথা কমাতে পারবেন। যে ব্যাক্তি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে এবং দিনে পাঁচবার মেসওয়াক করে থাকে তাদের তার অনেক ভালো এবং সুস্থ থাকে। তাই আপনি যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করেন এবং তার সাথে মেসোয়া করেন তাহলে দাঁতের নানা রকম হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন।

মেসওয়াক আমাদের দাঁতের জন্য খুবই উপকারী। মেসওয়াক করার মাধ্যমে আমাদের দাঁতের নানা রকম সমস্যা গুলো ভালো হয়ে যায়। আর যারা প্রত্যেক নামাজের সময় নিয়মিত মেসওয়াক করে তাদের দাঁতের যাবতীয় রোগ ব্যাধি থেকে দূরে থাকে। তাদের ব্যথা মুক্ত থাকতে পবিত্র আল কোরআনের একটি আমলও রয়েছে।

উচ্চারণ: কুল হুওয়াল্লাযি আনশাআকুম ওয়া যা’আলালাকুমুস সাম্‌’আ ওয়াল আব্‌ছারা ওয়াল আফ্ইদাতা ক্বালিলাম্মা তাশকুরুন। (সূরা মুলক- আয়াত ২৩)

বাংলা অর্থ: বলুন, তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং দিয়েছেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর। তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।

যারা পবিত্র আল কুরআনের এই আয়াতটি পড়বে তাদের দাঁতের ব্যথা অনেকাংশেই কমে যাবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক মুসলিম উম্মাহকে এ আয়াতের মাধ্যমে আমল করে দাঁতের ব্যথা থেকে মুক্ত থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক দাঁত ব্যথা হলে করণীয়, দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় সমূহ কি কি সেই বিষয়ে একটি বিস্তারিত আলোচনা আপনার মাঝে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এই ধরনের আরও আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট প্রতিনিয়ত ভিজিট করুন। এতক্ষণ পাশে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সুস্থ থাকবেন ভালো থাকবেন এই আশা রেখে শেষ করছি আজ এই পর্যন্তই আল্লাহ হাফেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *